বাংলাদেশে কলা একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক কৃষিপণ্য। স্বল্প সময়ে ফলন এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বহু কৃষক কলা চাষে আগ্রহী। তবে ফলন ধরে রাখতে হলে বিভিন্ন রোগ-পোকা, আবহাওয়া, মাটি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো জানা এবং তার সমাধান জানা জরুরি।
এ ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো—
সমস্যা:
– নরম বা জলাবদ্ধ মাটি
– দোআঁশ/বেলে-দোআঁশ না হলে শিকড় বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
– জমিতে আগাছা ও পুষ্টিহীনতা থাকলে ফলন কমে যায়
সমাধান:
✅ জমি উঁচু বা মাঝারি উচ্চতার হতে হবে
✅ দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি সর্বোত্তম
✅ প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি পচা গোবর, চুন ও জৈব সার প্রয়োগ
✅ আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে মাটি আলগা করতে হবে
সমস্যা:
– রোগাক্রান্ত চারা
– অশুদ্ধ জাত
– ভাইরাস বহনকারী সাকার বা সাকারলিং রোপণ
সমাধান:
✅ টিস্যু কালচার বা নির্বাচিত স্বাস্থ্যকর চারা ব্যবহার করুন
✅ কৃষি অফিস/বিশ্বস্ত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করুন
✅ রোপণের আগে ফরমালিন বা ফাঙ্গিসাইড দিয়ে জীবাণুমুক্ত করুন
সমস্যা:
– অতিরিক্ত পানি দিলে গাছ পড়ে যায়
– খরা মৌসুমে সেচের অভাবে গাছ শুকিয়ে যায়
– জমিতে পানি দাঁড়িয়ে থাকলে শিকড় পচে
সমাধান:
✅ বর্ষার আগে জমিতে নালা বা ড্রেন ব্যবস্থা
✅ খরায় ৭–১০ দিন অন্তর সেচ
✅ ঝড়প্রবণ এলাকায় বাঁশ কাঠি বা দড়ি দিয়ে গাছ বাধাই করে রাখতে হবে
সমস্যা:
– নাইট্রোজেনের ঘাটতিতে পাতা হলুদ হয়
– পটাশের অভাবে ফল ছোট হয়
– ফসফরাসের ঘাটতিতে শিকড় কমে
সমাধান (প্রতি গাছে):
✅ গর্ত প্রস্তুতের সময়:
পচা গোবর: ১৫-২০ কেজি
টিএসপি: ২০০ গ্রাম
মিউরেট অফ পটাশ: ১৫০ গ্রাম
শীর্ষ ড্রেসিং:
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম (২ ভাগে)
থাই জিপসম ও নুর জিঙ্ক প্রয়োজনে প্রয়োগ
✅ ক) পানামা রোগ (Fusarium Wilt)
লক্ষণ: পাতা হলুদ হয়ে ভাজের দিক থেকে শুকায়, গাছ মারা যায়
প্রতিকার:
আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলুন
মাটিতে মাইক ৫০ ডব্লিউ পি/ডিসকভার ৭৫ ডব্লিউ পি প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে উভয় ১৬ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
রোগমুক্ত টিস্যু কালচার চারা ব্যবহার
✅ খ) সিগাটোকা রোগ (পাতা দাগ)
লক্ষণ: পাতায় বাদামি বা কালো দাগ
প্রতিকার:
ডিসকভার ও মেমোরি প্লাস ফাঙ্গিসাইড প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে উভয় ১৬ গ্রাম/মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পাতা কেটে ফেলুন
✅ গ) ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট
লক্ষণ: গাছ নিষ্প্রাণ, পাতায় ঝুলে থাকা ভাব
প্রতিকার:
আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা
মাটিতে জীবাণুনাশক প্রয়োগ
✅ ক) কলার ছিদ্রকারী পোকা
লক্ষণ: কাণ্ডে ছিদ্র, গাছ দুর্বল
সমাধান:
এসি প্লাস ১০ ডব্লিউডিজি প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
পরশমনি ১০ ইসি এ্যালমিনিয়াম প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে ১৬ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
https://www.smartagrovet.com/product/poroshmoni-10ec-1-ltr-aluminum
✅ খ) মাকড়/জাবপোকা
লক্ষণ: পাতা কুঁকড়ে যাওয়া ও হলদে হওয়া
সমাধান:
পাহাড় ৮০ ডব্লিউডিজি প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে ৮ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
সাথে ওয়ানশর্ট ৮০ ডব্লিউডিজি প্রতি ১৬ লিটার মেশিনে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
https://www.smartagrovet.com/product/one-short-3-wdg-50-gm
সমস্যা:
– ঝড়-বন্যায় গাছ ভেঙে পড়ে
– শীতকালে বৃদ্ধি রুদ্ধ
– অতিরিক্ত তাপে ফলের ক্ষতি
সমাধান:
✅ ঝড়ের পূর্বে গাছ বাঁধাই
✅ সেফটি নেট বা কলার ছাতা ব্যবহার
✅ খরায় মালচিং
সমস্যা:
– ফল ছোট বা বাঁকা
– সঠিক সময় সংগ্রহ না করা
– বাজারে দাম কম পাওয়া
সমাধান:
✅ ফুল ফোটার ৯০-১২০ দিন পর সংগ্রহ
✅ গুচ্ছ মোড়ানো (পেপার/পলিথিন)
✅ পাইকারি হাট বা সমবায় বিপণন ব্যবস্থা
✅ কলা প্রক্রিয়াজাত পণ্য (চিপস, আচার) তৈরি
Last updated a month ago